অভিনব পদ্ধতিতে পানিতে তরমুজ চাষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনাবাদী থাকবে না কোনো জমি। বর্ষাকালে বা বন্যা দেখা দিলেও ফলবে ফসল। এবার পানির ওপর অভিনব পদ্ধতিতে হবে তরমুজ চাষ! পটুয়াখালীর কৃষিবিজ্ঞানীরা মাটিবিহীন বা হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষের গবেষণা চালাচ্ছেন।

অভিনব পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ। গাছের নিচে মাটি নেই। ঘন সবুজ লতা। লতার ফাঁকে সবুজ রঙের তরমুজ। মাটি ছাড়াই এভাবে পানির ওপর তরমুজ চাষ হচ্ছে। এ দৃশ্য পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের। সেখানে পানিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। মাটিবিহীন পানিতে ফসল উৎপাদনের এই কৌশলকে হাইড্রোপনিক বলে, যা একটি অত্যাধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় সারা বছর কিংবা অমৌসুমেও সবজি, ফল, ফুল চাষাবাদ করা যায়।

এ পদ্ধতিটি চাষ হওয়ায় মাটিবাহিত ও কৃমিজনিত রোগ হয় না। কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হওয়ার কারণে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। তাই অনায়াসে অর্গানিক ফসলের সম্ভার গড়ে তোলাও সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ছোট-বড় উভয় পরিসরে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিচ্ছন্নভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়। এটি হোম-ফার্মিংয়ের জন্য একটি আদর্শ প্রযুক্তি। তাই এটি অধিক লাভজনক। পাশাপাশি অর্থকরী ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ১৯৯৭ সালে জাপানে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এই প্রযুক্তি প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। শুধু তরমুজ নয়, মাটি ছাড়াই জন্মাবে প্রিয় ফসল, ফুল, সবজি। মাটির পরিবর্তে পানিতেই জন্মাতে পারবেন টমেটো, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, ক্ষীরা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, অ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ মলিকাসহ আরও অনেক ফসল। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব। এই চাষাবাদে কোনো কীটনাশক প্রয়োজন হবে না। এমনকি সার দেয়ার প্রয়োজন হবে না। তাই অনায়াসে গড়ে তোলা যাবে অর্গানিক ফসলের সম্ভার। সেই গবেষণার সূত্র ধরেই ওই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ ।

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক ঘেঁষে উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র। এ প্রতিষ্ঠানটির এককোণে পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজের আবাদ শুরু হয় গত বছর জুলাই থেকে। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের এই তরমুজ বাগানটিতে প্লাস্টিকের পাইপ ছিদ্র করে ১৪০টি তরমুজের চারা রোপণ করা হয়েছে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে ফলন এসে গাছে ঝুলে বড় হচ্ছে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে করা তরমুজ। এভাবে তিন মাস পরপর বছরে চার বার আবাদ করা যায় হাইড্রোপনিক পদ্ধতির তরমুজ। জুলাইয়ের প্রথম দিকে যে তরমুজ আবাদ হয়েছে তা ইতিমধ্যে অনেক বড় হয়ে গেছে এবং তিন মাস শেষে তা আরও অনেক বড় হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যাক্তারা।

তরমুজ আবাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, গত বছরে জুলাই থেকে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজ আবাদ শুরু করেন এবং এতে তারা সফলও হন। বর্ষাকালে এ অঞ্চলের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে তাদের কোনো কাজ থাকে না, তারা বেকার হয়ে পড়েন। এ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ শুরু করলে কৃষকদের ভাগ্যবদল এবং আয়ের বড় একটি উৎস হবে। এতে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবেন।

উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ পদ্ধতিতে পাইপে সংরক্ষিত পানিতে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান তরল আকারে প্রয়োগ করে সারা বছর তরমুজসহ বিভিন্ন ফল ও শাক-সবজি উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের পটুয়াখালীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সারা বছর তরমুজ চাষ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে ফসল উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন চাষিরা। তাই এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলে চাষিরা হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজসহ শাক-সবজির আবাদে আগ্রহী হবেন বলে মনে করি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর